বাংলায় চলেছে তীব্র গরম পাশাপাশি চিরাচরিত হয়ে আসা বর্ষার বৃষ্টি । এমতাবস্থায় অনেকেই বৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকতে আগে থেকে প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছেন। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকরা। বাইকার হিসেবে আমরা আপনার সমস্যাগুলো খুব ভালোভাবে অনুধাবন করি। তাই বর্ষায় বাইক নিয়ে যাবতীয় সকল ঝামেলার সমাধান দিতে আমরা প্রস্তুত করেছি আজকের ব্লগটি। তো চলুন জেনে নেই বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর সেফটি টিপস সম্পর্কে।
সূচীপত্র
বৃষ্টি বাইকারদের জন্য কেন ঝুঁকিপূর্ণ?
বাইক আর গাড়ির মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হচ্ছে, বাইক জিনিসটা একেবারেই খোলামেলা। রাইডার নিজে তো ভিজেনই, সাথে ভিজে যায় তার সাথে থাকা সবকিছু। হেলমেটের কাঁচ ভিজে আর ঝাপসা হয়ে রাস্তাও দেখতে কষ্ট হয়। আবার রাস্তায় পানি উঠলে বাইকের ইঞ্জিনসহ অন্যান্য বিভিন্ন পার্টসও ভিজে যায়।
রাস্তা ভেজা থাকার মানে হচ্ছে, পানির একটা প্রলেপ থাকার কারণে বাইকের চাকা ভালোভাবে গ্রিপ করতে পারবে না। গ্রিপ ভালো না থাকলে, ব্রেক করা আর থেমে যাওয়ার মধ্যে বাইকটা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশ কিছুটা সামনে এগিয়ে যায়।
বর্ষায় টেনশন ফ্রি বাইক চালানোর উপায়ঃ
আসলে বর্ষা মৌসুমে ভেজা রাস্তায় বাইক চালানোর সময় নানা সমস্যার মুখে পড়তে হয় বাইক চালকদের প্রতিনিয়ত। যা থেকে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বেড়ে গেছে অনেক। তাই আগে থেকে বাইক কিংবা স্কুটারে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখলে রিলেক্সে বাইক রাইড করতে পারবেন। আসুন জেনে নেই বৃষ্টিতে কোন কোন বিষয় খেয়াল রাখলে টেনশন ফ্রি বাইক চালানো যায়।
১। মোটরসাইকেলের নিয়মিত সার্ভিসিং
শ্রাবণ মেঘের বর্ষা বাংলায় একটু বেশিদিন স্থায়ী হয় ফলে বাইকের দিকেও নজর একটু বেশি দিতে হয়। সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে বাইকের যত্ন সার্ভিসিং এক রকম এবং এমন বর্ষায় তার ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র দেখা যায়। আপনার বাইকের কলকব্জা ঠিক থাকলে অনেক ভেজা রাস্তায় ও বাইক সহজে চালানো যাবে। তবে সার্ভিস করার সময় বেশ কিছু পুরোন জিনিসের খেয়াল রাখা উচিত যেমন- পুরনো টায়ার।
২। ইন্ডিকেটরের কার্যকারিতা পরীক্ষা
আপনার বাইক নিয়ে সুস্থভাবে ঘরে ফিরতে চান? তবে যত্নে রাখুন ইন্ডিকেটর। আসলে বর্ষা হোক বা নাহোক বাইকের ইন্ডিকেটরের যত্ন সবসময় আপনার নেওয়া উচিত। রাস্তায় ভালো দৃশ্যমান্যতার জন্য এই ইন্ডিকেটরগুলির কাজ করা প্রয়োজন। যদিও কোনো ভাবে ইন্ডিকেটর ভেঙে যায় বা বাল্ব ফিউজ হয়ে থাকে তাহলে দ্রুত সেটি চেইঞ্জ করে নিতে হবে।
৩। ব্রেকিং সিস্টেম চেক করা
আপনার বাইক রাইডিং এর ভেজা রাস্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ব্রেকিং সিস্টেম। বুঝতেই পারছেন এই ব্রেক সিস্টেম যদি ভাঙাচোরা থাকে তাহলে আপনার জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। ব্রেক খুব শক্ত থাকলে রাস্তায় চাকা স্কিড খেতে পারে। আবার ব্রেক ঢিলে হয়ে গেলে অন্য বিপদ সময়মতো বাইক থামানো যায় না। সুতরাং মোটরসাইকেলের ব্রেক যদি খারাপ থাকে তাহলে তা অবশ্যই মেকানিককে দেখিয়ে ঠিক করে নিন।
সতর্কতাঃ
১। বৃষ্টিতে বাইক ধীরে চালান, দ্রুত গতিতে বাইক চালানো মোটেই উচিত হবে না। যেহেতু রাস্তা পিচ্ছিল থাকে তাই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যে কোনো মুহূর্তে।
২। অন্য গাড়ি থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। এতে রাস্তায় পানিতে ডুবে থাকা গর্তের অবস্থান বুঝে এড়িয়ে চলতে সুবিধা হবে।
৩। হাঁটু পর্যন্ত জমা পানিতে বাইক চালালে ইঞ্জিনের ক্ষতি হতে পারে। সাইলেন্সরে পানি ঢুকতে পারে। বাইক কখনোই বেশিক্ষণ পানির উপর দাঁড় করিয়ে রাখবেন না।
৪। মাথার সুরক্ষায় সেফটি হেলমেট
উপরোক্ত বিষয়গুলির মতোই আরও একটি জরুরি জিনিস হেলমেট। কারণ দুর্ঘটনার সময় আপনার মাথা রক্ষা করে হেলমেট। তাই বর্ষাকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বেরোনোর আগে একটি ISI মার্কযুক্ত হেলমেট পরা উচিত। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে সেই হেলমেটের স্ট্র্যাপ যেন লক সিস্টেম থাকে এবং হেলমেটটি আপনার মাথায় ভালো যেন খুব ভাবে ফিট হয়।
৫। হেডল্যাম্প ও টেইলল্যাম্প পরীক্ষা
অদূরে কোন অন্ধকার রাস্তা হোক কিংবা কোন পুরাতন জীর্ণশীর্ণ রাস্তা যেকোন বাইকের সকল ধরনের দৃশ্যমান্যতার কাজ করে হেডলাইট এবং টেইলল্যাম্প। যদি এর মধ্যে একটিও খারাপ হয়ে যায় তবে মনে করে নিন সামনে মহাবিপদ। ঝড়ো বৃষ্টির সময় রাস্তায় গাড়ি বাইক ঠিক ভাবে চোখে পড়ে না। কিন্তু হেডল্যাম্প ও টেইলল্যাম্প যদি জ্বালা থাকে তাহলে দুর্ঘটনার হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়। বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগে তাই হেডল্যাম্প ও টেইলল্যাম্প ঠিক করে নেওয়া দরকার।
৬। পুরনো টায়ার পরিবর্তন
আপনি চাইলেই পুরনো কোন জিনিস দিয়ে দিব্যি সময় কাটাতে পারেন কিন্তু তা বাইকের টায়ারের ক্ষেত্রের একদম প্রযোজ্য নয়। উঁচু নিচু রাস্তা সমতল ভূমি, কি বাদ আছে আর?
আপনার বাইকের টায়ারকে সব ধরনের রাস্তাকে অতিক্রম করে আসতে হয়। আপনার বাইকের চাকা যদি জীর্ণ কিংবা বহুদিনের পুরাতন হয়ে যায় তবে আপনার তা দ্রুত পরিবর্তন করিয়ে নেওয়া উচিত। বর্ষায় চাকায় নুড়ি পাথর কিংবা লৌহজাত জিনিস লেগে চাকা পাংচার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সময় মতো বাইকের পুরনো টায়ার বদলে নিন।
৭। মোটরসাইকেল রেইনকোট
মোটরসাইকেল-উপযোগী রেইনকোট, অথবা উইন্ডব্রেকার জ্যাকেট ও প্যান্ট এই বৃষ্টির দিনে আপনার সবচেয়ে বড় বন্ধু। যারা রেইনকোট ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, তাদের জন্য স্টাইলিশ দেখতে উইন্ডব্রেকার প্রায় একই রকম সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
- আঙ্গুলের সাথে রাবারের তৈরি ওয়াইপার বা সেই ধরণের বাড়তি অংশ দেয়া থাকে। বৃষ্টির সময় হেলমেটের কাঁচে পানি জমলে একটু পরপর সেই অংশ দিয়ে পানি সরিয়ে ফেলা যায়।
- এই ধরণের গ্লাভস খুঁজে না পেলে, বাইক চলমান অবস্থায় আপনার মাথা সাইডের দিকে সামান্য ঘোরালে বাতাসের বেগে পানি ঝরে যাবে। তবে দৃষ্টি যেন রাস্তা থেকে এক মুহূর্তের জন্য না সরে।
- ‘পিনলক’ বিশিষ্ট ভাইজর ভ্যাপসা মৌসুমে যেকোনো সাধারণ ভাইজরের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী। এটি আপনার ভাইজরের ভেতরের দিকে ফগিং, অর্থাৎ ঘেমে যাওয়া প্রতিরোধ করে। আলাদাভাবে এই পিনলক সিস্টেম কিনতেও পাওয়া যায়, যা বেশিরভাগ আধুনিক হেলমেটে সাপোর্ট করে।
- যদি আপনার হেলমেটে পিনলক সিস্টেম না থাকে, তাহলে ভাইজরের ভেতরের দেয়ালে সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে মুছে শুকনো করে নিন (শুধু পানি দিয়ে ধুবেন না)। এর ফলে ভাইজরের দেয়ালে সাবানের একটা সূক্ষ্ম প্রলেপ তৈরি হবে, এবং বেশ কিছুটা সময় পর্যন্ত ফগিং ঠেকাবে।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানো কি ঠিক হবে?
কোন ভাবেই ঝুকি নেওয়া ঠিক হবে না, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। তবে জরুরী প্রয়োজনে সবধরনের সতর্কতা এবং সেফটি মেনে বাইক চালাতে পারেন।
বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর পর কী করবেন?
আপনি যদি চান আপনার মোটরসাইকেলটি বৃষ্টিতে রাইড করার পরে চকচকে এবং নতুন দেখাক, তাহলে শুকনো কাপড় দিয়ে সমস্ত পানি ও ময়লা পরিষ্কার করা গুরুত্বপূর্ণ।
বৃষ্টি আমার বাইক নষ্ট করবে?
যদি একটি বাইক দীর্ঘ সময়ের জন্য বৃষ্টিতে থাকে, তবে মরিচা এবং ক্ষয় দ্বারা উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতি করতে পারে।
নিয়ন্ত্রিত স্পিড কতো রাখা ভালো?
বৃষ্টিতে বাইক সবসময় ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে চালানো নিরাপদ। এর বেশি গতি হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়বে।
শেষকথা
বৃষ্টি চলুক নিজ গতিতে, কিন্তু বাইক ব্যবহারকারী হিসেবে আপনার নিরাপত্তা নিজের হাতে, পাশাপাশি আপনার সাথে রাইডে থাকা মানুষটির দায়িত্ব ও কিন্তু আপনার। তাই বৃষ্টিতে বাইক নিয়ে রিলেক্সে ভ্রমণ করতে আমরা আশা করছি বর্ষার সময় বৃষ্টিতে মোটরসাইকেল চালানোর সেফটি টিপস গুলো আপনার কাজে আসবে।
শখের মোটরসাইকেলের সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে পারেন বাইকগার্ড জিপিএস ট্র্যাকার। ফিচার হিসাবে পাচ্ছেন ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, লাইভ ট্র্যাকিং, জিও-ফেন্সিং, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন বাইকগার্ড প্যাকেজ সমূহ অথবা চাইলে আমাদের এক্সপার্ট টিমের সহযোগিতা পেতে নিচের ফরমটি জমা দিতে পারেন।
Have you ever considered about adding a little bit more than just your articles? I mean, what you say is fundamental and everything. But think about if you added some great visuals or videos to give your posts more, “pop”! Your content is excellent but with images and clips, this site could undeniably be one of the very best in its field. Great blog!
We will consider your advice carefully, thank you.