বাইকের নিয়ে আমাদের নতুন নতুন জায়গা ঘুরার কিংবা নতুন সব অভিজ্ঞতা নেওয়ার ইচ্ছের শেষ নেই। মাইলের পর মেইল আমরা বাইকের সাথে পাড়ি দেই। কিন্তু আপনি কি জানেন প্রাথমিক অবস্থায় আপনার বাইকের প্রয়োজন ব্রেক ইন পিরিয়ড ব্রেক? আজকের ব্লগে আমরা বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড সম্পর্কে আলোচনা করবো,কেন এবং কিভাবে বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড মেনে চলবেন আসুন তা জেনে নেই বিস্তারিত ভাবে।
সূচীপত্র
মোটর সাইকেলের ব্রেক ইন পিরিয়ড কি?
আপনার শখের বাইকটি আপনি বহু সাধনা এবং সময়ের বিনিময়ে ক্রয় করেন। প্রাথমিক অবস্থায় নতুন বাইকটি একটি শিশুর মতোই থাকে। বাইকের অভ্যন্তরীণ পার্টস বা যন্ত্রাংশ একেবারেই নমনীয় থাকে, ফলে বাইক চালনে খেয়াল রাখতে হয় অনেক কিছুই। বাইকের এই শুরু পথে থেকে বাইকটি স্বাভাবিক পুরোপুরি সাধারণ চলাচলের উপযোগী না হওয়া পর্যন্ত সময়েই আমরা বলবো বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড। বাইকের টায়ার, পিস্টন ইত্যাদি অসংখ্য পার্টস থাকে যা প্রাথমিক অবস্থায় নতুন বাইক হিসেবে ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। যদি সময় সীমার কথা বলা হয় তবে বলা যায় তা হতে পারে প্রথম কয়েকশো বা হাজার (০—১০০০) কিমি।
আসলেই কি ব্রেক ইন পিরিয়ড মানা উচিত?
বাইক নিয়ে আসলে আমাদের আবেগের শেষ নেই। আমরা খুব উৎসবমুখর পরিবেশে একটি বাইক কিনে ফেলি কিন্তু আসল যাত্রার পথ শুরু এখান থেকেই। আপনি চাইলেই একটি দামি ব্র্যান্ডের বাইক কিনে আজীবন মেয়াদি সার্ভিস আশা করতে পারেন না।
বাইকের ক্ষেত্রেও আপনার মেনে চলতে হবে চরম পর্যায়ের কিছু নিয়ম-কানুন। তা হোক বর্ষায় গাড়ির যত্ন কিংবা ব্রেক ইন পিরিয়ডের ইস্যু। বাইক কিনে ফেলার চেয়ে বাইক নিয়মের মাঝে চালানো বড় ব্যাপার। আপনি যদি সঠিক ব্রেক ইন পিরিয়ড না মানেন তবে বাইক নিয়ে খুব দ্রুতই টেকনিক্যাল টিমের কাছে দৌড়াতে হবে আপনাকে।
ব্রেক ইন পিরিয়ডের নিয়মাবলী কোথায় পাবেন?
আমাদের দেশের চাইনিজ, ইন্ডিয়ান, জাপানি এবং ইতালিয়ান জাতীয় মোটরসাইকেল সহজেই পাওয়া যায়। তবে ভেবে দেখার বিষয় হলো এইসব ধরনের বাইকগুলোর ব্রেক ইন পিরিয়ড এক রকম নয়। এদের ব্রেক ইন পিরিয়ড আলাদা হয়ে থাকে। তবে হলেও এসব বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ডের বিষয়গুলো প্রায় একই।
আপনি যখন বাইক ক্রয় করবেন তখন বাইকের সাথে একটু ম্যানুয়াল বুক দেওয়া থাকবে তাতে ব্রেক ইন পিরিয়ডের নিয়মাবলী দেয়া থাকে। সাধারণত সব ধরনের বাইকের প্রাথমিক ব্রেক ইন পিরিয়ড নূন্যতম ১০০০ কি.মি হয়ে থাকে। তবে যত বেশি মাইলেজ হাতে রেখে বাইক চালানো যায় ততো বাইকের ইঞ্জিন সুস্থ থাকে।
নতুন বাইকে ব্রেক ইন পিরিয়ডের মূলনীতি কি?
- সাধারণ সময়েই বাইকের গতি ৬০ কি:মি:/ঘন্টা এর মধ্যে রাখুন।
- নতুন বাইকের মিনেরাল ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করুন।
- ব্রেক ইন পিরিয়ডে বাইকে অতিরিক্ত যাত্রী না নেয়াই ভালো।
- নতুন বাইকের ক্ষেত্রে ৩০ মি থেমে থেমে বাইক চালানোর চেষ্টা করুন।
- এই সময়ে উচ্চ আরপিএমে ইঞ্জিন চালু করা থেকে বিরত থাকুন।
- অনেক বেশি অ্যাক্সিলারেশন তোলার অভ্যাস বর্জন করুন।
- বাইকের ইঞ্জিনে ইঞ্জিন অয়েল প্রবেশের সুযোগ দিন। প্রয়োজনে বাইক স্টার্ট দেওয়ার পর কিছুক্ষণ বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে থাকুন।
- ব্রেক ইন পিরিয়ডে হাইওয়েতে দূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে বের হবেন না।
নোটঃ নতুন বাইক ক্রয়ের ক্ষেত্রে দক্ষ বাইক স্পেশালিস্ট কিংবা শো-রুমে থাকা কোন টেকনিশিয়ান থেকে বাইক এবং বাইকের ব্রেক ইন পিরিয়ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন। বাইকের ভিন্নতা অনুসারে ব্রেক ইন পিরিয়ডের নিয়ম-কানুন ও ভিন্ন হয়ে থাকে।
ব্রেক ইন পিরিয়ডে কেমন তেল ব্যবহার করা উচিত?
আমাদের দেশের বেশির ভাগ বাইকই বাহির থেকে ইমপোর্ট করা, ফলে বাইকের ভিন্নতার সাথে ব্রেক ইন পিরিয়ড ধরন ও ভিন্ন হয়। বাইকের প্রতি ব্রেক ইন পিরিয়ডে বাড়তি যত্ন নিতে হয়। এক্ষেত্রে বাইকে কি ধরনের তেল ব্যবহার হচ্ছে তাও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এই সময়ে ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিম্নে এসব নিয়ে আলোচনা করা হলঃ
১. বাইক ক্রয়ের সময় শো-রুম থেকে জেনে নিবেন কবে আপনার বাইকটি আমদানি করা হয়েছিল। যদি বাইকের আমদানি করার সময় ১ মাসের অধিক হয় তবে খুব দ্রুতই ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করুন। পুরাতন জ্বলানী বাইকের জন্য যেমন খারাপ তেমনি ব্রেক ইন পিরিয়ডে বাইকের ইঞ্জিনের মারাত্নক ক্ষতি সাধন করে।
২. মনে রাখবেন মোটরবাইক কেনার পর প্রতি ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন জরুরী, আর এই ইঞ্জিন অয়েল ৫০০ কিলোমিটারের বেশি কোনভাবেই ব্যবহার করা ঠিক না।
৩. আপনার বাইকে যদি অটো ফিল্টার থেকে থাকে তবে, প্রতিবার ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করার সময় বাইকের অটো ফিল্টার পরিবর্তন করুন। কারন বাইকের অয়েল ফিল্টারে ইঞ্জিন থেকে ক্ষয় হয়ে যাওয়া অমসৃণ অংশ ও পুরান তেলের অংশ রয়ে যায়, ফলে নতুন অয়েল যুক্ত হলে তা পুরাতনের সাথে মিশে দুষিত হয়ে যায়।
৪. আপনার বাইককে সুস্থ আর প্রাণবন্ত রাখতে ব্রেক ইন পিরিয়ডে মিনারেল অয়েল ব্যবহার করুন। মিনারেল অয়েল দামে সাশ্রয়ী এবং ব্রেক ইন পিরিয়ডে বাইকের জন্য আদর্শ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। এছাড়াও এটি কম সময়ে ব্যবহারের উপযোগী। ব্রেক ইন পিরিয়ডের সময়ে বাইকের ঘন ঘন ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করতে হয়। প্রায় কম করে হলেও ৪-৫ বার প্রায়।
শেষকথা
ব্রেক ইন পিরিয়ডে বাইকের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। বিশেষ করে নতুন সব বাইকের ক্ষেত্রে এটি বেশ লক্ষণীয় বিষয়। আমরা আশা করি,ব্রেক ইন পিরিয়ডের এই সময়ে আপনি বাইকের প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হবেন। সেই সাথে প্রিয় বাইকের আপনার প্রতিটি ভ্রমন হোক আরও আরামদায়ক এবং নিরাপদ।
শখের মোটরসাইকেলের সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে পারেন বাইকগার্ড জিপিএস ট্র্যাকার। ফিচার হিসাবে পাচ্ছেন ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, লাইভ ট্র্যাকিং, জিও-ফেন্সিং, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন বাইকগার্ড প্যাকেজ সমূহ অথবা চাইলে আমাদের এক্সপার্ট টিমের সহযোগিতা পেতে নিচের ফরমটি জমা দিতে পারেন।