১২টি উপায়ে বাইকের যত্ন করুন, মাইলেজ বাড়ান!

আপনার বাইক নিয়ে আপনার চিন্তার কারণের শেষ নেই। নতুন হোক কিংবা পুরাতন সব ধরনের বাইকের যত্ন নেওয়া বেশ গুরুত্বপুর্ন্য একটি বিষয়। হাজারও কাজের ব্যস্ততার মাঝে আমরা সুযোগ পেলেই বসে যাই বাইক নিয়ে। সব ঠিক-ঠাক আছে কি না চেক করতে। বাইকদের জন্য আজ তাই আমরা লিখছি এই বিশেষ ব্লগটি। এতে মোটর বাইকের যত্নের বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনার করা হয়েছে।

সূচীপত্র

কি কি উপায়ে বাইকের যত্ন নিবেন?

বাইকের যত্ন - washing green motorcycle

আপনি যদি নিয়মিত বাইক নিয়ে রাইডিং করেন তবে মোটরসাইকেলের যত্ন নিয়ে কিছু বিষয় আপনার খেয়াল রাখা উচিত। এসব বিষয় খেয়াল রাখলে বাইক অনেকদিন ভালো থাকবে পাশাপাশি বাইকের পেছনে করা অতিরিক্ত খরচ ও কমে যাবে। আসুন যেনে নেই নিয়মিত বাইকের যত্নে করণীয় কিছু বিষয়-

১. নিয়মিত বাইক পরিষ্কার রাখা

বাইকের প্রথম এবং অন্যতম যত্ন হলো নিয়মিত পরিষ্কার করা। বাইকের বিভিন্ন অংশ যেমন টায়ার, ফেন্ডার, এবং শরীর মাটির কারণে ময়লা জমে যায়। রোদ ও বৃষ্টির কারণে বাইকের পেইন্ট এবং অন্যান্য অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই, বাইক পরিষ্কার রাখার জন্য নরম সাবান এবং জল ব্যবহার করুন। বিশেষ করে, চেইন এবং স্পোকগুলোতে বিশেষ যত্ন নিন।

২. বাইকের চেইন এবং ক্যাসেটের যত্ন

বাইক চালানোর সময় চেইন ও ক্যাসেটের কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চেইন সঠিকভাবে তেল দেওয়া এবং সময়ে সময়ে পরিষ্কার করা উচিত। সঠিকভাবে তেল দেওয়া হলে চেইনটি মসৃণভাবে চলবে এবং এর কার্যকারিতা বাড়বে। ক্যাসেটেরও নিয়মিত পরিষ্কার ও তেল দেওয়া জরুরি।

৩. টায়ারের চাপ পরীক্ষা

বাইকের টায়ারের চাপ সঠিকভাবে থাকা উচিত। চাপ কম হলে বাইকের স্থিরতা কমে যায় এবং এটি দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়ায়। নিয়মিত টায়ারের চাপ পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষ করে দীর্ঘ রাইডের আগে। সঠিক চাপ বজায় রাখার জন্য টায়ারের পাশে উল্লেখিত নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

৪. মোটরসাইকেলের ব্রেক সিস্টেমের পরীক্ষা

ব্রেক সিস্টেমের কার্যকারিতা রাইডিংয়ের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্রেক প্যাড এবং ডিস্ক পরীক্ষা করুন। যদি ব্রেক প্যাডগুলো পরিধান হয়ে যায় তবে সেগুলো পরিবর্তন করুন। ব্রেক fluid এর স্তরও পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনে পরিপূর্ণ করুন।

৫. ইঞ্জিনের নিয়মিত চেকআপ

বাইকের ইঞ্জিনের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে নিয়মিত চেকআপ করা প্রয়োজন। ইঞ্জিন অয়েল এবং ফিল্টার পরিবর্তন করার সময়সূচি মেনে চলুন। এটির মাধ্যমে ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা এবং আয়ু বাড়ানো যায়। তাই ইঞ্জিনকে নিয়মিত চেক করুন। ইঞ্জিন আপডেট থাকবে তো বাইক আপডেট থাকবে সহজেই।

৬. বৈদ্যুতিক সিস্টেমের যত্ন

বাইকটির বৈদ্যুতিক সিস্টেম যেমন লাইট, হর্ন, এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ সময়ে সময়ে পরীক্ষা করুন। যদি কোনো লাইট কাজ না করে, তবে তা দ্রুত পরিবর্তন করুন। বৈদ্যুতিক সংযোগগুলোও চেক করুন যাতে কোনও সমস্যা না হয়। বর্ষা কিংবা শীতের আগেই এই পার্টসগুলো চেক করুন।

৭. সঠিক পার্কিং

বাইককে সঠিকভাবে পার্ক করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি সম্ভব হয়, বাইকটি ছাদের নিচে বা একটি নিরাপদ স্থানে পার্ক করুন। এতে বাইক বৃষ্টির পানি, সূর্যের রশ্মি এবং অন্যান্য পরিবেশগত ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

৮. বাইক কভার ব্যবহার

যদি বাইকটি বাইরে থাকতে হয়, তাহলে বাইক কভার ব্যবহার করুন। এটি বাইকটিকে বৃষ্টির পানি এবং ময়লা থেকে রক্ষা করবে। কভারটি সঠিকভাবে বাইকের সাইজের হতে হবে যেন এটি সম্পূর্ণভাবে ঢেকে রাখতে পারে। খুব ছোট কভার হলে তা বাইকটিকে সম্পূর্ণরূপে ঢেকে রাখতে পারবে না, ফলে বাইকের কিছু অংশ উন্মুক্ত থেকে যাবে এবং সুরক্ষার অভাব দেখা দেবে।

৯. সিজনার প্রস্তুতি

বাইকের যত্ন নেওয়ার জন্য সিজন অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। বর্ষাকালে বিশেষভাবে বাইকের ব্রেক এবং টায়ারের যত্ন নিন। শীতকালে বাইকের ব্যাটারি পরীক্ষা করুন এবং গ্রীষ্মকালে ইঞ্জিনের ওয়েল পরিবর্তন করুন। আপনি চাইলে বৃষ্টিতে বাইকের যত্ন নিয়ে এই ব্লগটি পড়ে আসতে পারেন।

১০. নিয়মিত সার্ভিসিং

নিয়মিত সার্ভিসিং বাইকের দীর্ঘস্থায়িত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। বাইকটি সার্ভিসিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে চলুন। সার্ভিসিংয়ের সময় বাইকের সকল অংশের পরীক্ষা করা হয়, যা ভবিষ্যতের সমস্যাগুলো আগেই চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

১১. নিরাপত্তা গিয়ার ব্যবহার

বাইক চালানোর সময় নিরাপত্তা গিয়ার ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধুমাত্র আপনার জীবন রক্ষা করে না, বরং বাইক চালানোর অভিজ্ঞতাও আরামদায়ক এবং নিরাপদ করে তোলে। বাইক চালকদের সর্বদা মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার করা উচিত, যা মাথা রক্ষা করে এবং দুর্ঘটনার সময় মারাত্মক আঘাত থেকে সুরক্ষা দেয়। শুধু হেলমেটই নয়, গ্লাভস ব্যবহার করা খুবই প্রয়োজনীয়, কারণ গ্লাভস আপনার হাতের মুভমেন্টকে উন্নত করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে বাইক চালানোর সময় হাতের আরাম নিশ্চিত করে।

১২. রাইডিং স্টাইল

সঠিক রাইডিং স্টাইল অনুসরণ করা শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং আপনার বাইকের স্থায়িত্ব এবং পারফরম্যান্সের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাইক চালানোর সময় অতিরিক্ত স্পিড করা বা আকস্মিক ব্রেক কষা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এই অভ্যাসগুলো শুধুমাত্র বিপজ্জনকই নয়, এটি আপনার বাইকের যন্ত্রাংশের উপরও অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করে।

অতিরিক্ত স্পিড বাইকের ইঞ্জিনের উপর অত্যধিক লোড তৈরি করে, যা ইঞ্জিনের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং এর ফলে জ্বালানির ব্যবহারও বেড়ে যায়। অন্যদিকে, আকস্মিক ব্রেক কষলে আপনার বাইকের ব্রেক প্যাড এবং টায়ার দ্রুত ক্ষয় হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা তৈরি করবে।

বাইকের আবশ্যিক রক্ষণাবেক্ষণ সামগ্রী

বাইকের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু অংশ নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজন, যেগুলো সময়মতো পরিবর্তন বা মেরামত করতে হয়। এগুলোকে আমরা ‘আবশ্যিক রক্ষণাবেক্ষণ সামগ্রী’ বলতে পারি। বাইকের এইসব গ্যাজেট এবং এক্সসেসরিজ বাইকের জন্য খুব জরুরী বলা যায়।

  • টায়ার – রাস্তায় চলাচলের সময় ঘর্ষণজনিত ক্ষয় হয়, যা নিয়মিত চেক করতে হবে।
  • ব্রেক প্যাড – দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এর কার্যক্ষমতা কমে যায়, যা নিয়মিত পরীক্ষা ও পরিবর্তন জরুরি।
  • ইঞ্জিন ফ্লুইড – ইঞ্জিনের সুষ্ঠু কার্যকারিতা বজায় রাখতে ইঞ্জিন অয়েল এবং কুল্যান্টের পরিমাণ ঠিক রাখতে হবে।
  • ফিল্টার (তেল ও বায়ু) – বাইকের ইঞ্জিনে ফিল্টারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, তাই নিয়মিত এগুলো পরিষ্কার ও পরিবর্তন করতে হবে।
  • চেইন ও স্প্রকেট – চালানোর সময় এগুলোর উপর বেশি চাপ পড়ে, তাই নিয়মিত লুব্রিকেশন এবং টান চেক করা জরুরি।
  • ব্যাটারি – নির্ভরযোগ্য ইলেকট্রিক সিস্টেমের জন্য ব্যাটারির ক্ষমতা নিয়মিত পরীক্ষা করা উচিত।

নতুন বাইকের যত্নে বিশেষ সতর্কতা

আপনি কি নতুন বাইক কিনেছেন? তবে আপনার নতুন বাইকের যত্নের জন্য রয়েছে কিছু টিপস। একটি বিষয় সব সময় খেয়াল রাখবেন নতুন বাইক কেনার পর প্রথম কিছুদিনের নেওয়া যত্ন বাইকের দীর্ঘস্থায়ী কর্মক্ষমতা এবং নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে কিছু প্রাথমিক টিপস দেওয়া হলো, যা নতুন বাইকের যত্নে সহায়ক হবে:

  • নতুন ইঞ্জিনে প্রথম ১০০০ কিলোমিটার যত্ন নিয়ে চালান।
  • চেইন নিয়মিত তেল দিয়ে মসৃণ রাখুন।
  • প্রথম ৩ মাসের মধ্যে সার্ভিসিং করান।
  • বাইক প্রস্তুতকারকের নির্দেশনা অনুযায়ী ফুয়েল ব্যবহার করুন।
  • ব্রেক সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা নিশ্চিত করুন।
  • প্রথম রাইড থেকেই টায়ার প্রেসার সঠিক রাখুন।

এই প্রাথমিক যত্ন সম্পর্কিত টিপসগুলো নতুন বাইকের দীর্ঘস্থায়ী এবং মসৃণ রাইড নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে। বাইক নতুন কিনে থাকলে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন।

শেষকথা

নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ আপনার বাইকের পারফরম্যান্স ও নিরাপত্তা বাড়ায়। টায়ার, ব্রেক প্যাড, ইঞ্জিন ফ্লুইড, ফিল্টার, এবং চেইনের মতো অংশগুলো সময়মতো পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে যান্ত্রিক সমস্যা কমে এবং মেরামতের খরচও নিয়ন্ত্রণে থাকে। সঠিক যত্নে আপনার বাইক দীর্ঘমেয়াদে ভালো থাকবে এবং ভ্রমণ হবে আরও নিরাপদ।

শখের মোটরসাইকেলের সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে পারেন বাইকগার্ড জিপিএস ট্র্যাকার। ফিচার হিসাবে পাচ্ছেন ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, লাইভ ট্র্যাকিং, জিও-ফেন্সিং, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন বাইকগার্ড প্যাকেজ সমূহ অথবা চাইলে আমাদের এক্সপার্ট টিমের সহযোগিতা পেতে নিচের ফরমটি জমা দিতে পারেন।

    মোটরসাইকেল সুরক্ষায় বাইকগার্ড সম্পর্কে জানতে




    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *