ঘরে বসে অনলাইনে লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া

আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সড়ক দুর্ঘটনা একটি নিত্য দিনের ব্যাপার। অনেক নিয়ম কানুন মেনেও এই দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। এখন ভালো দক্ষ চালন সড়কে সুন্দরভাবে শুধুমাত্র গাড়িই চালান না, পাশাপাশি মেনে চলে ড্রাইভিংয়ের সকল নিয়ম। আপনার এবং আমাদের সকলের নিরাপত্তার খাতিরে ড্রাইভিং লাইসেন্স দরকার। চলুন জেনে নেই অনলাইনে লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে-

সূচীপত্র

ড্রাইভিং লাইসেন্স কি এবং কেন প্রয়োজন?

ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি সরকারি অনুমোদনপত্র যা কোন ব্যক্তি বৈধভাবে সড়কে গাড়ি চালাতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়। এটি একটি আইনি নথি যা নির্দেশ করে যে একজন ব্যক্তি নির্দিষ্ট ধরনের মোটরযান চালানোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং দক্ষ।

  • বৈধভাবে গাড়ি চালানোঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সড়কে গাড়ি চালানো আইনত অপরাধ। বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন আইনের আওতায়, ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত গাড়ি চালানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি আইনগত অনুমোদনপত্র যা নির্দেশ করে যে আপনি সড়কে গাড়ি চালানোর যোগ্য।
  • সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রশিক্ষণ এবং পরীক্ষা একজন ব্যক্তির গাড়ি চালানোর দক্ষতা এবং সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি নিশ্চিত করে যে একজন ড্রাইভার ট্রাফিক নিয়ম-কানুন মেনে চলতে সক্ষম এবং সড়ক নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারদর্শী।
  • দুর্ঘটনা প্রতিরোধঃ অযোগ্য এবং অদক্ষ ড্রাইভারদের সড়কে চলাচল রোধ করার জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষ ড্রাইভারদের লাইসেন্স প্রদান করা হয়, যা দুর্ঘটনা কমাতে সহায়ক।
  • ব্যক্তিগত ও অন্যান্য মানুষের নিরাপত্তাঃ লাইসেন্স প্রাপ্ত ড্রাইভার সড়কে চলার সময় নিজেদের এবং অন্যদের নিরাপত্তা বজায় রাখতে সচেতন থাকে। তাদের প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষা তাদেরকে বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম করে।
  • আইনি প্রমাণ ও পরিচয়পত্রঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স একটি আইনি নথি যা বিভিন্ন জায়গায় পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি একটি সরকারি অনুমোদনপত্র যা আপনার সনাক্তকরণে সহায়ক হতে পারে।

বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা

বাংলাদেশি নাগরিকরা যারা শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ, তারা বিআরটিএ’র ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন:

  • শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে। তবে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এস.এস.সি পাস হতে হবে।
  • শিক্ষানবিশ লাইসেন্সঃ লাইসেন্স পাওয়ার প্রথম এবং প্রয়োজনীয় শর্ত হল একটি শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহণ করা।
  • বয়সঃ অপেশাদার চালকদের জন্য ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং পেশাদার চালকদের জন্য ন্যূনতম বয়স ২০ বছর হতে হবে।

এই শর্তগুলো পূরণ করে, যে কেউ বিআরটিএ’র ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন।

অনলাইনে লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়া

বাংলাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া বেশ সহজ এবং সুসংহত। প্রথমে বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টালে গিয়ে এনআইডি (NID) ব্যবহার করে একটি ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হয়। তারপর শিক্ষানবিশ লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন প্রক্রিয়াতে যে বিষয় রয়েছে তা নিম্নে দেওয়া হলো-

১. ড্রাইভিং লাইসেন্স অনলাইন আবেদন ফরম

শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল (BSP) এর মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীকে তার এনআইডি (NID) ব্যবহার করে একটি ইউজার অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে।

২. প্রোফাইল সম্পূর্ণকরণ

ইউজার প্রোফাইলে বিভাগ, জেলা ও থানা সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। প্রোফাইলের ভিত্তিতে আবেদনটি সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ সার্কেল অফিসে পাঠানো হবে।

৩. পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিতি

নির্ধারিত দিনে আবেদনকারীকে শিক্ষানবিশ লাইসেন্স ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসহ স্ব-শরীরে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে এবং বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট যাচাইকরণ সম্পন্ন হলেই পরীক্ষার সুযোগ দেয়া হবে।

৪. ফলাফল জানানো

সর্বোচ্চ ১ কর্মদিবসের মধ্যে বিআরটিএ কর্তৃক উত্তীর্ণ/অনুত্তীর্ণ ফলাফল অনলাইনে আপলোড করা হবে এবং আবেদনকারীর মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে।

৫. ফি প্রদান

বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল (BSP) এর মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্সের দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার ফলাফল দেখে নির্ধারিত ফি অনলাইনে প্রদান করতে হবে (মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্য কোন প্রচলিত গেটওয়ে ব্যবহার করে)। ব্যাংকে সরেজমিনে/ব্যাংক কাউন্টারে ফি প্রদানের সুযোগ নেই।

৬. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড

ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন প্রক্রিয়ার সময় সঠিকভাবে সব ডকুমেন্ট (যেমন: মেডিকেল সনদ, স্কুল সনদ, ইউটিলিটি বিল) স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। পেশাদার লাইসেন্সের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট রিপোর্টও আপলোড করতে হবে।

৭. অনুমোদন প্রাপ্তি

বিআরটিএ কর্তৃক সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফি সঠিক পাওয়ার পর ড্রাইভিং লাইসেন্সের অনুমোদন প্রদান করা হবে।

৮. অটো জেনারেটেড স্লিপ

অনুমোদনের পর আবেদনকারীর অ্যাকাউন্টে অটো জেনারেটেড স্লিপ (Temporary authorization) প্রদর্শিত হবে, যা প্রিন্ট করে লেমিনেশন করে গ্রাহক তার নিজের কাছে সংরক্ষণ করবেন এবং স্মার্ট কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করবেন।

৯. স্মার্ট কার্ড বিতরণ

স্মার্ট কার্ড প্রিন্টিং শেষ হলে, আবেদনকারীর ঠিকানায় ডাকযোগে স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পাঠানো হবে।

শেষকথা

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির এই প্রক্রিয়াটি সহজ এবং সুসংহত, যা নিশ্চিত করে যে প্রতিটি ড্রাইভার সড়কে নিরাপদে চলাচল করতে পারে। সঠিক নথিপত্র ও নিয়ম মেনে আবেদন করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া কোন জটিল কাজ নয়। তাই, আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করুন এবং সড়কে নিরাপদে ও আইনতভাবে চলাচল করুন। নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের মাধ্যমে আপনার এবং অন্যদের জীবন রক্ষা করুন। শুভ ড্রাইভিং!

শখের মোটরসাইকেলের সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে পারেন বাইকগার্ড জিপিএস ট্র্যাকার। ফিচার হিসাবে পাচ্ছেন ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, লাইভ ট্র্যাকিং, জিও-ফেন্সিং, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন বাইকগার্ড প্যাকেজ সমূহ অথবা চাইলে আমাদের এক্সপার্ট টিমের সহযোগিতা পেতে নিচের ফরমটি জমা দিতে পারেন।

    মোটরসাইকেল সুরক্ষায় বাইকগার্ড সম্পর্কে জানতে




    Leave a Reply

    Your email address will not be published. Required fields are marked *