সঠিক টায়ার নির্বাচন বাইকারদের জন্য একটি বড় ধরনের সমস্যা। একজন বাইকারের প্রতিদিন অসংখ্য পথ বাইকে অতিক্রম করতে হয়। দীর্ঘ সময়ের এই পথচলাতে দরকার হয় সঠিক বাইকের সঠিক টায়ার নির্বাচন। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই জানে না বাইকের টায়ার নির্বাচনে আসলেই কি কোন নিয়ম আছে কি না? কিংবা কি কি বিষয় খেয়াল রেখে বাইকের টায়ার বাছাই করতে গেলে কি কি করতে হয়। আজকের ব্লগটিতে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
সূচীপত্র
বাইকের টায়ার নির্বাচনে যা জানা প্রয়োজন
আপনার বাইকের টায়ার নির্বাচন অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। যে টায়ারটি আপনি নিচ্ছেন সেটির লোড, আকার, সাইজ, ঘুর্নন দিক বেগ, লোড নেওয়ার ক্ষমতা,গতি ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়ের উপর টায়ার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। কম দামে টায়ার কিনে ঠকে যাওয়ার মানুষ ও কিন্তু কম দেখা যায় না। আসুন জেনে নিই এই বিষয়ে বিস্তারিত-
মোটরসাইকেলের চাকার গঠন
আপনার মোটরসাইকেলের টায়ার নিয়ে জানতে হলে, আগে জানতে হবে এর চাকার গঠন সম্পর্কে এবং এটি কিভাবে কাজ করে। যেকোন মোটরসাইকেলের চাকার গঠনে ৪টি ভাগ থাকে-
- সাইডওয়াল
- ট্রেড
- বিড
- র্যাডিয়াল
একটি বাইকের চাকাকে উপরে দেওয়া ৪টি অংশ সমানভাবে ধরে রাখে। চাকার ভারসাম্যতা ৪টি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। আসুন যেনে নেই চাকার এই বিষয়গুলো সম্পর্কে-
- সাইডওয়াল হচ্ছে বাইকের চাকার যে আবরণ রয়েছে সেটি। যেটিকে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই। চাকায় যদি পর্যাপ্ত বাতাস না থাকে, তখন এই সাইডওয়াল অল্পেই বাকা হয়ে যায়। আর যদি চাকায় সঠিক বাতাস থেকে থাকে, তাহলে তবে মোটরবাইকের ভর সাইডওয়াল সহজেই বহন করতে পারে।
- ট্রেড হলো চাকার যেই অংশ যা চলন্ত বাইকের সরাসরি মাটির সংস্পর্শে চলে আসে। টায়ারের শেপ অনুসারে ট্রেডের অনেক ধরণের হতে থাকে। রাস্তায় ট্র্যাকশন ধরে রাখা ট্রেডের অন্যতম একটি বিশেষ কাজ।
- চাকার বিড হচ্ছে চাকার ভেতর থাকা রাবার এবং মেটালের রিং। এটি টায়ারটিকে রিমের সাথে শক্তভাবে আটকে রাখে এবং ভেতরে বাতাস ধরে রাখতে সহায়তা করে।
- র্যাডিয়াল স্টিলের তার যা চাকার দৃঢ়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সব ধরনের চাকাতেই র্যাডিয়াল থাকে, তবে তা চাকার ধরন অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।
টায়ারের সাইজ:
গাড়ির টায়ারের মতো বাইকের টায়ারের নির্দিষ্ট একটি সাইজ রয়েছে। সাধারণত টায়ারের এই সাইজকে দুইটি হিসাবে ভাগ করা হয়। প্রথম বিষয়টি খেয়াল রাখা হয় টায়ারের চওড়া বিষয়, আর দ্বিতীয় বিষয় হলো টায়ারের ব্যাসার্ধ কতটুকু। আসুন এই বিষয়টি আরেকটু সহজেই বুঝে নেই, আপনার টায়ারে যদি লেখা থাকে ৪.২০-২০ এর মানে হলো টায়ারটি ৪.২০ ইঞ্চি মোটা এবং ব্যাস ২০ ইঞ্চি।
টায়ারের লোড:
যেকোন ধরনের টায়ারের লোড নেওয়া একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বা ক্ষমতা থাকে। বাজারে যেসব টায়ার বিক্রি হচ্ছে তাঁদের গায়ে এই লোডের ক্ষমতা লিখা থাকে। বাইকের টায়ার অতিরিক্ত লোড নিতে পারে না। লোড বহনে অক্ষম হলে টায়ার সাধারণত গরম হয়ে যায়। অনেক সময় টায়ার ফেটেও যেতে পারে। কিভাবে টায়ারের ক্ষমতা কেমন? টায়ারের গায়ে বিশেষ সংখ্যা দিয়ে লোড ক্যাপাসিটি লেখা থাকে। যেমন ৩০ মানে তার ধারন ক্ষমতা ১০৬ কেজি, ৪০ মানে তার ধারন ক্ষমতা ১৪০ কেজি, বা ৯০ মানে তার ধারন ক্ষমতা ১৬০ কেজি।
Tire wear indicator (TWI):
আপনি যদি বাইক নিয়ে অনেক বেশি ঘুরেন এবং বাইকটিকে পিক লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যান তবে টায়ারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। প্রতিটা টায়ারের নির্দিষ্ট একটি টায়ার সেইফটি মার্ক দেওয়া থাকে। যা দেখে সহজেই বোধা যায় টায়ার বদলানোর সময় আসন্ন কি না!
অনেকের মনেই প্রশ্নই জাগে TWI বিষয়টি কি? এটি হলো- টায়ারে দুই বিটের মাঝে হালকা উঁচু হয়ে থাকা ছোট রাবার। এটি খুঁজে পেতে টায়ার সাইড ওয়ালে TWI মার্ক করে দেওয়া থাকে। পুরাতন টায়ারে এটি সহজেই চোখে ধরা দিবে। তবে আপনার বাইকের টায়ার ক্ষয়ের নির্দেশনা যদি বিট বরাবর পৌঁছে যায় তবে অতি দ্রুত টায়ার চেইঞ্জ করুন।
টায়ার ঘুর্নন দিক:
সকল ধরনের রিম বা হুইলে টায়ার লাগানোর একটি পদ্ধতি দেখা যায়। আপনার বাইকের টায়ারের বিটকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে সহজেই বোঝা যায় টায়ার সামনে কোন স্টাইলে ঘুরবে। প্রতিটি টায়ারের গায়ে এই বিষয়ে একটি ডিরেকশন দেওয়া থাকে। যা দেখে সহজেই আন্দাজ করা যায়, টায়ার কোন দিকে ঘুরবে।
সর্বোচ্চ গতি:
বাজারে অনেক ধরনের বাইক দেখা যায়। তাই বাইকের ধরনভেদে টায়ারের ধরন ও বদলাবে। বাইকের টায়ারের গতির বেগ কত হবে তা টাইয়ারের গায়ে উল্লেখ্য থাকে। যেমন B মানে এই টায়ারের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০কিমি/ঘন্টা, J মানে ১০০কিমি/ঘন্টা অথবা Z থাকলে বুঝতে হবে ২৪০কিমি/ঘন্টা বা তারও বেশি।
টিউবলেস টায়ার:
আমাদের প্রতিদিন চোখের সামনে যেসব টায়ার দেখা যায় তা বেশির ভাগই টিউবলেস টায়ার। সহজে বললে যেসব টায়ারের ভেতরে কোন টিউব থাকে না, তাঁদের টিউবলেস টায়ার বলে। এই টায়ারগুলো সাধারণত বাতাস এবং রিম ধরে চলাচল করে। চলুন জনপ্রিয় এই টিউবলেস টায়ার সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেই-
- টিউব, রিম বা স্পোক জন্য কোন রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন পরে না।
- সেলফ সেলিং সম্ভব।
- এই টায়ারের টিউবের কোন দরকার নেই।
- টায়ারগুলোর লিকেজ সহজে ঠিক করা সম্ভব। এমন কি এটির জন্য হুইল খোলার কোন প্রয়োজন নেই।
- অনেক বেশি গতি হলেও টায়ার চেপ্টা হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
চাকার উৎপাদনের সময়:
আপনার বাইকের টায়ার নির্বচনে উৎপাদনের সময় অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজকের টায়ারটি ভবিষ্যতে ঠিক কতদিন বাইকের সঙ্গী হিসেবে সাথে থাকবে তা নির্ভর করে এই সময়ের উপর। আপনি যদি প্রতিদিন বাইক একটানা ব্যবহার করেন তবে টায়ার ক্ষয় হবে এবং এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু বাইক না উইজ করলেও আপনার টায়ারের ক্ষতি হয়। যেমনঃ বাতাস, আদ্রতা, বাইকের ওজন, রেডিয়েশন ইত্যাদি সরাসরি বাইকের টায়ারে প্রভাব ফেলে। এই গরমে বাইকের টায়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আপনার টায়ার ও কিন্তু বৃদ্ধ হয়! খালি চোখে ধরা না পড়লেও এটি সত্য। বেশির ভাগ এক্সপার্টের মতামত অনুসারে একটি ভালো টায়ার সর্বোচ্চ ৬ বছর ব্যবহার করা উচিত। তাই হিসাব করুন। টায়ার উৎপাদনের সময় কখন ছিলো? এই বিষয়টিকে ছোটভাবে দেখবেন না।
শেষকথা
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম বাইকের টায়ার নির্বাচন এর উপায় কি কি রয়েছে। আপনি যদি এই বিষয়গুলো খেয়াল করে তবে টায়ার নির্বাচন করেন তবে সেটি আপনার নিরাপদ ভ্রমণের জন্য সহায়তা করবে। তাই এক্সাপার্টের সহায়তা নিয়ে সঠিক টায়ার নির্বাচন করুন।
শখের মোটরসাইকেলের সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে পারেন বাইকগার্ড জিপিএস ট্র্যাকার। ফিচার হিসাবে পাচ্ছেন ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, লাইভ ট্র্যাকিং, জিও-ফেন্সিং, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন বাইকগার্ড প্যাকেজ সমূহ অথবা চাইলে আমাদের এক্সপার্ট টিমের সহযোগিতা পেতে নিচের ফরমটি জমা দিতে পারেন।