বাংলাদেশের অধিকাংশ বাইক রাইডাররা শুধুমাত্র বাইক কিনে চালানোর দিকে বেশি ফোকাস করেন, কিন্তু তাদের অনেকেই জানেন না, শুধু ড্রাইভিং শেখা এবং বাইক চালানোই যথেষ্ট নয়। এটা মাথায় রাখতে হবে, বাইক চালানোর সময় কিছু আইন মেনে চলাও বাধ্যতামূলক। আরেকটা ব্যাপার, বাইক মডিফিকেশন। আপনি যদি বাইকের পার্টস পরিবর্তন বা কাস্টমাইজ করতে চান, তাহলে অবশ্যই জানবেন, বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এ কিছু নতুন নিয়ম আছে যা বাইক মডিফিকেশন সম্পর্কিত। যদি এগুলো না জানেন এবং ভুল কিছু করেন, তাহলে আইনি সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাহলে, আসুন জেনে নেওয়া যাক, বাইক মডিফিকেশনের ক্ষেত্রে কোন কোন আইনি নিয়ম আপনার জানা উচিত!
সূচীপত্র
বাইক মডিফিকেশন কি?
বাইক মডিফিকেশন বলতে সাধারণত বাইকের বিভিন্ন অংশের পরিবর্তন বা কাস্টমাইজেশন বোঝায়, যাতে বাইকটির আউটলুক, পারফরম্যান্স বা আরামদায়কতা বৃদ্ধি পায়। বাইক মডিফিকেশন করার মাধ্যমে বাইকটির ফিচার বা আকৃতি পরিবর্তন করা হয়, যা বাইক মালিকের ব্যক্তিগত পছন্দের সাথে মানানসই হতে পারে।
বিআরটিএ’র সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ (Bike Modification Law by BRTA’s Road Transport Act 2018)
২০১৮ সালের নতুন সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী বাইকের কিছু প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাইকের বিভিন্ন উপাদান যেমন দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা, সিটের সংখ্যা, চাকার আকার ও অবস্থান, ইন্ডিকেটর লাইট, ব্রেক, গিয়ার সিস্টেম, এক্সহস্ট বা ধোঁয়া নির্গমন ব্যবস্থা, ইত্যাদি পরিবর্তন করা যাবে না, তবে কিছু নিয়ম এবং শর্ত মেনে বিশেষভাবে মডিফিকেশন করা সম্ভব।
তবে বাইকের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করা যাবে না। বিআরটিএ’র নির্দেশনা এবং শর্ত অনুযায়ী আবেদন করে বাইকের অভ্যন্তরীণ বা বাইরের কিছু পরিবর্তন সম্ভব। তবে রেজিস্ট্রেশনের সময় যে প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্যগুলো বিআরটিএ’র কারিগরি নির্দিষ্টকরণের মধ্যে রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন করতে হলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন নেই।
একটি উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাইকের হেডলাইটে থাকা হ্যালোজেন লাইট পরিবর্তন করে এলইডি লাইট ব্যবহার করা যাবে। এ ধরনের পরিবর্তন বিআরটিএ’র নিয়মে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। তাছাড়া হেডলাইটের পাশে থাকা ডিআরএল লাইটের রঙ পরিবর্তন বা হেডলাইটের উপরের ভাইজর প্লেটটি সঠিকভাবে ফিটিং করে পরিবর্তন করাও অনুমোদিত।
কি কি মোডিফিকেশন করা যাবে
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, বাইকে কিছু নির্দিষ্ট মোডিফিকেশন করা যেতে পারে, তবে এগুলোর জন্য বিআরটিএ’র নি র্দেশনা এবং শর্ত মেনে চলা আবশ্যক। যেমন, বাইকের বাহ্যিক অংশের কিছু পরিবর্তন করা যায়, যেমন হেডলাইটের লাইট সোর্স পরিবর্তন (হ্যালোজেন থেকে এলইডি), সাইড ডিআরএল লাইটের রঙ পরিবর্তন, এবং হেডলাইটের ভাইজর প্লেট সঠিকভাবে ফিটিং করে পরিবর্তন। এছাড়া, বাইকের চাকা, টায়ার, সাসপেনশন সিস্টেম এবং হ্যান্ডেলবার পরিবর্তন করা যেতে পারে যদি তা বাইকের নিরাপত্তা এবং স্ট্যাবিলিটি বজায় রাখে। আরও বেশ কিছু বিষয় নিম্নে দেওয়া হলো-
মাডগার্ড এবং চাকা
আপনার বাইকের মাডগার্ড পরিবর্তন করতে চাইলে সেটি করা সম্ভব, তবে চাকার রিমের সঙ্গে থাকা লম্বা বারগুলোর রঙ পরিবর্তন করতেও কোনো আইনি বাধা নেই। এছাড়া, যদি আপনি মোটা টায়ার ব্যবহার করতে চান এবং আপনার বাইকের রিম তা সাপোর্ট করে, তাহলে সেক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা নেই। তবে, নতুন টায়ার নির্বাচনের সময় বাইকের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সতর্ক থাকতে হবে।
হ্যাণ্ডেল পরিবর্তন
বাইক হ্যান্ডেল পরিবর্তন করা যায়, তবে যারা বাইক স্টান্টে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি আরও বেশি সতর্কতার বিষয়। থ্রি-ডি হ্যান্ডেল বা পাইপ হ্যান্ডেলবারের মধ্যে পরিবর্তন করা সম্ভব, কিন্তু এটি করার আগে একজন দক্ষ মেকানিকের সহায়তা নেওয়া উচিত, যাতে বাইকের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
রিয়ার ভিউ মিরর
বাইকের রিয়ার ভিউ মিররের আকার পরিবর্তনেও কোনো বাধা নেই। আপনি চাইলে মিররের আকার কম-বেশি করতে পারেন, তবে বাইক চালানোর সময় রিয়ারভিউ মিরর অপসারণ করবেন না, কারণ এটি নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইঞ্জিনের পাশে সাধারণত প্লেট অ্যাডজাস্টমেন্ট করার অপশন থাকে, যা আপনি প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারেন।
প্লেট এবং বাম্পার
বাইকটির প্লেট পরিবর্তন বা অপসারণের ক্ষেত্রে কোনো আইনি নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে এটি অবশ্যই বিআরটিএ’র নিয়ম অনুযায়ী করা উচিত। বাইকের বাম্পার পরিবর্তন করতেও কোনো বাধা নেই, এবং বাম্পারের পাশ বা পুরো বাম্পার অপসারণও করা যেতে পারে।
ইঞ্জিন গার্ড বা কভার
বাইকটির ইঞ্জিনের জন্য গার্ড বা কভার ইনস্টল করা যায়, বিশেষত যদি এটি ফিট করার অপশন থাকে। এটি বাইকের সৌন্দর্য এবং ইঞ্জিনের সুরক্ষা বাড়াতে সাহায্য করে। যদি ইঞ্জিন গার্ড বা কভার ইনস্টল করা না থাকে, আপনি ইচ্ছা করলে এটি যুক্ত করতে পারেন। তবে, যদি আপনার বাইক ইতিমধ্যেই গার্ড থাকে এবং আপনি না চাইলে সেটি খুলে ফেলাও সম্ভব।
সিট পরিবর্তন
আপনি চাইলে বাইকের সিট পরিবর্তন করতে পারেন। যদি সিট দুটি ভাগে থাকে, তবে সেটিকে এক ভাগের সিটে পরিবর্তন করা যেতে পারে, তবে এটি বাইকের সাথে পুরোপুরি ফিট হওয়া প্রয়োজন।
ফুট পেগ এবং সাস্পেনশন
বাইকের ফুট পেগের রাবারের কভার পরিবর্তন করা সম্ভব, এছাড়া বাইকের সামনের সাস্পেনশনও পরিবর্তন করা যেতে পারে। বিশেষত, ডাউনসাইড আপ থেকে আপসাইড ডাউন সাস্পেনশন বা উল্টো সাস্পেনশন সিস্টেম পরিবর্তন করা যেতে পারে। পিছনের সাস্পেনশন দুটি থেকে একটিতে পরিবর্তন করা সম্ভব, যদিও এটি কিছুটা ব্যয়বহুল হতে পারে।
সাইল্যান্সার
একই মডেলের এক্সহস্ট সাইল্যান্সার বা কম শব্দের সাইল্যান্সার ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি বাইকের শোর কমানোর পাশাপাশি কার্যক্ষমতাও ঠিক রাখে, এবং এতে আইনি কোনো বাধা নেই।
টেইল লাইট এবং পিছনের হ্যান্ডেল
বাইকের টেইল লাইটের সংলগ্ন প্লেট বা পিছনের হ্যান্ডেলও পরিবর্তন করা যেতে পারে। আপনি চাইলে পিছনের হ্যান্ডেল গোলাকার বা বার হ্যান্ডেল হিসেবে পরিবর্তন করতে পারেন, এতে কোনো আইনি বাধা নেই।
শেষকথা
বাংলাদেশে বাইক পরিবর্তন আইনে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও বাইক মডিফিকেশন করা সম্ভব। তবে, সড়ক নিরাপত্তা এবং আইন মেনে পরিবর্তন করা জরুরি। বিআরটিএ’র অনুমতি এবং কারিগরি সহায়তা নিয়ে বাইকের নিরাপত্তা সিস্টেম এবং পারফরম্যান্স উন্নত করা যায়। বাইক পরিবর্তনের আগে নিরাপত্তা এবং আইনি নিয়ম মেনে চলা সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শখের মোটরসাইকেলের সকল তথ্য অ্যাপের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করতে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যবহার করতে পারেন বাইকগার্ড জিপিএস ট্র্যাকার। ফিচার হিসাবে পাচ্ছেন ইঞ্জিন লক/আনলক করার সুবিধা, লাইভ ট্র্যাকিং, জিও-ফেন্সিং, এবং ট্রাভেল হিস্টোরি চেক করা সহ আরও অনেক সুবিধা বিস্তারিত জানতে দেখুন বাইকগার্ড প্যাকেজ সমূহ অথবা চাইলে আমাদের এক্সপার্ট টিমের সহযোগিতা পেতে নিচের ফরমটি জমা দিতে পারেন।